ইছামতি রেঞ্জে ‘৩১ শতাংশ ঘুষ সিন্ডিকেট’: সুফল প্রকল্পে কাগুজে উন্নয়নের নামে কোটি টাকার লুটপাট

চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের ইছামতি রেঞ্জে সুফল প্রকল্পসহ একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পে প্রকৃত কাজ না করেই প্রায় ১ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও ভাগাভাগির অভিযোগে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি হয়েছে। এই দুর্নীতির মূল হোতা হিসেবে উঠে এসেছে রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. তৌহিদুর রহমানের নাম। অভিযোগ অনুযায়ী, বরাদ্দকৃত অর্থের একটি বড় অংশ নিজেরা ভাগ করে নিয়েছেন তিনি এবং বন বিভাগের এক প্রভাবশালী ডিএফও। মুখ বন্ধ রাখতে ওই ডিএফওকে দেওয়া হয়েছে প্রকল্পের ৩১ শতাংশ অর্থ। স্থানীয়দের ভাষায়, এটি শুধু ব্যক্তিগত দুর্নীতি নয়, বরং গোটা বন বিভাগে গড়ে ওঠা একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেটের অংশ।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে ইছামতি রেঞ্জে সুফল প্রকল্পের আওতায় পূর্বে সৃজিত এক হাজার হেক্টর বাগানের রক্ষণাবেক্ষণ এবং নতুন ১০০ হেক্টর বাগান সৃজনের জন্য বিপুল বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে বাস্তবে এসব কাজের কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। পুরোনো বাগানগুলো উপেক্ষায় নষ্ট হয়ে গেছে, নতুন বাগান তো চোখেই পড়ে না। অথচ নথিপত্রে দেখানো হয়েছে, সব কাজ সম্পন্ন এবং পুরো বরাদ্দ ব্যয়। অভিযুক্ত কর্মকর্তা দাবি করেছেন, সব খরচ নিয়ম মেনেই হয়েছে, কিন্তু মাঠ পর্যায়ে স্থানীয়রা বলছেন—সব কিছু শুধু কাগজে-কলমেই।
আরও ভয়াবহ অভিযোগ হলো, প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে কর্মরত স্টাফদের স্বাক্ষর জাল করে তাদের নামে অর্থ উত্তোলন দেখানো হয়েছে। যারা এই অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলার চেষ্টা করেছেন, তাদের হুমকি, বদলি ও বেতন বন্ধ করার মতো হয়রানির মধ্যে ফেলা হয়েছে। কয়েকজন ফরেস্ট গার্ড অভিযোগ করেছেন, তারা প্রতিবাদ করায় মানসিক চাপ এবং দফায় দফায় হুমকির শিকার হয়েছেন। ফলে পুরো রেঞ্জে তৈরি হয়েছে এক ধরনের আতঙ্ক ও নীরবতা। কেউ মুখ খুললেও তা গোপনে, প্রকাশ্যে নয়।
এই পরিস্থিতি বন বিভাগে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির সম্পূর্ণ অভাবের প্রতিচ্ছবি। শুধু একজন রেঞ্জ কর্মকর্তা নয়, বরং এই ঘটনার মাধ্যমে বন বিভাগের ভেতরে দীর্ঘদিনের পচন ধরা দুর্নীতির চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। প্রকল্পের নামে লুটপাট হচ্ছে, অথচ মাঠ পর্যায়ে পরিবেশ ও বন রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তা উপেক্ষা করছেন বা এতে জড়িত হচ্ছেন।
এই বিষয়ে দৃষ্টি আর্কষণ করা হলে চট্টগ্রাম ডিভিশন প্রধান রেজাউল করিম বলেন এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।