ডিএফও-এসিএফের প্রশ্রয়ে বেপরোয়া রেঞ্জার তৌহিদুর

সিএফ রেজাউল করিম মিডিয়াকে বললেন রেঞ্জার তৌহিদুরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার নির্দেশ দিয়েছেন। অথচ তার উল্টো পথে হাটছেন সহকারী বন সংরক্ষক মো: জয়নাল আবেদীন। রেঞ্জার তৌহিদুরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে মো: জয়নাল আবেদীন বলেন তৌহিদুর ভালো মানুষ। তার বিরুদ্ধে কেউ ষড়যন্ত্র করছে। সে দুণীতি করতে পারে না। জানাগেছে রেঞ্জার তোহিদুর সহকারী বন সংরক্ষক মো: জয়নাল আবেদীনকে মাসিক মাসোহারা দিয়ে থাকেন। এদিকে সহকারী বন সংরক্ষক মো: জয়নাল আবেদীনের বিরুদ্ধেও রয়েছে চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ।
অভিযোগ রয়েছে, সহকারী বন সংরক্ষক (সদর ও চট্টগ্রাম) মো: জয়নাল আবেদীন এই অবৈধ লেনদেরে হোতা। জয়নাল আবেদীনের নামে মধুনাঘাট ব্রিজ এলাকায় প্রতিদিন আশি হাজার থেকে এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত চাঁদা তোলা হয় কাঠ ও ফার্নিচারবাহী গাড়িগুলো থেকে। এ কাজে মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত রয়েছে রাসেল ও সুমন নামের দুই ব্যক্তি।
কিছুদিন আগে রাসেল র্যাব চান্দগাঁওয়ের হাতে হাতে নাতে ধরা পড়ে এবং দুই মাস কারাবাস করে, জয়নাল আবেদীন হস্তক্ষেপে জামিনে মুক্ত হয়ে এসে পুনরায় চাঁদা আদায়ের কাজে লিপ্ত হয়, সাথে নেয় সুমনকে। হাটহাজারী চেকপোস্ট থেকে প্রতিদিন টিপি ও টিপি বহির্ভূত কাঠ পরিবহনকারী গাড়িগুলোর কাছ থেকে জয়নাল আবেদীন নামে প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকা আদায় হয় এবং ফৌজদারহাট চেকপোস্ট থেকেও একইভাবে প্রতিদিন প্রায় সত্তর হাজার টাকা উঠানো হয় স্লিপ আকারে। পার্বত্য রাঙামাটি থেকে টিপি ভিত্তিক কাঠবাহী প্রতিটি গাড়ি থেকে ৫০০ টাকা করে আদায় করা হয় কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির নেতা কাজল এর মাধ্যমে, যার অর্থ তাঁর বিকাশ নম্বরে জমা হয়, মাসিক হিসাব করলে প্রায় দুই লক্ষ টাকা আদায় হয়। বান্দরবান থেকেও টিপি অনুযায়ী কাঠবাহী প্রতিটি গাড়ি থেকে ৫০০ টাকা হারে চাঁদা নেওয়া হয় কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ল্যাডা জাহাঙ্গীর সরাসরি সহকারী বন সংরক্ষক জয়নাল আবেদীনের নিজস্ব একাউন্টে জমা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে, এবং এর পরিমাণ প্রায় তিন লক্ষ টাকা প্রতি মাসে। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ পরিবহন চালকেরা প্রশাসনিক নিরাপত্তার অভাবে মুখ খুলতে সাহস পান না, অথচ প্রতিদিন বন বিভাগের নির্ধারিত কিছু কর্মকর্তা ও দালালের পকেটে যাচ্ছে কোটি টাকার অবৈধ আদায়। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের দাবি, সহকারী বন সংরক্ষক জয়নাল আবেদীন সহ সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও চক্রের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। এদিকে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের ইছামতি রেঞ্জে সুফল প্রকল্পসহ একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পে প্রকৃত কাজ না করেই প্রায় ১ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও ভাগাভাগির অভিযোগে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি হয়েছে। এই দুর্নীতির মূল হোতা হিসেবে উঠে এসেছে রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. তৌহিদুর রহমানের নাম। অভিযোগ অনুযায়ী, বরাদ্দকৃত অর্থের একটি বড় অংশ নিজেরা ভাগ করে নিয়েছেন তিনি এবং বন বিভাগের এক প্রভাবশালী ডিএফও। মুখ বন্ধ রাখতে ওই ডিএফওকে দেওয়া হয়েছে প্রকল্পের ৩১ শতাংশ অর্থ। স্থানীয়দের ভাষায়, এটি শুধু ব্যক্তিগত দুর্নীতি নয়, বরং গোটা বন বিভাগে গড়ে ওঠা একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেটের অংশ।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে ইছামতি রেঞ্জে সুফল প্রকল্পের আওতায় পূর্বে সৃজিত এক হাজার হেক্টর বাগানের রক্ষণাবেক্ষণ এবং নতুন ১০০ হেক্টর বাগান সৃজনের জন্য বিপুল বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে বাস্তবে এসব কাজের কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। পুরোনো বাগানগুলো উপেক্ষায় নষ্ট হয়ে গেছে, নতুন বাগান তো চোখেই পড়ে না। অথচ নথিপত্রে দেখানো হয়েছে, সব কাজ সম্পন্ন এবং পুরো বরাদ্দ ব্যয়। অভিযুক্ত কর্মকর্তা দাবি করেছেন, সব খরচ নিয়ম মেনেই হয়েছে, কিন্তু মাঠ পর্যায়ে স্থানীয়রা বলছেন—সব কিছু শুধু কাগজে-কলমেই।
আরও ভয়াবহ অভিযোগ হলো, প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে কর্মরত স্টাফদের স্বাক্ষর জাল করে তাদের নামে অর্থ উত্তোলন দেখানো হয়েছে। যারা এই অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলার চেষ্টা করেছেন, তাদের হুমকি, বদলি ও বেতন বন্ধ করার মতো হয়রানির মধ্যে ফেলা হয়েছে। কয়েকজন ফরেস্ট গার্ড অভিযোগ করেছেন, তারা প্রতিবাদ করায় মানসিক চাপ এবং দফায় দফায় হুমকির শিকার হয়েছেন। ফলে পুরো রেঞ্জে তৈরি হয়েছে এক ধরনের আতঙ্ক ও নীরবতা। কেউ মুখ খুললেও তা গোপনে, প্রকাশ্যে নয়।
এই পরিস্থিতি বন বিভাগে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির সম্পূর্ণ অভাবের প্রতিচ্ছবি। শুধু একজন রেঞ্জ কর্মকর্তা নয়, বরং এই ঘটনার মাধ্যমে বন বিভাগের ভেতরে দীর্ঘদিনের পচন ধরা দুর্নীতির চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। প্রকল্পের নামে লুটপাট হচ্ছে, অথচ মাঠ পর্যায়ে পরিবেশ ও বন রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তা উপেক্ষা করছেন বা এতে জড়িত হচ্ছেন।
এই বিষয়ে দৃষ্টি আর্কষণ করা হলে চট্টগ্রাম ডিভিশন প্রধান রেজাউল করিম বলেন এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।