Ads

ব‌র্জ্যে দু‌ষিত হ‌চ্ছে কাপ্তাই হ্রদ, হুম‌কির মু‌খে জীববৈচিত্র্য

ব‌র্জ্যে দু‌ষিত হ‌চ্ছে কাপ্তাই হ্রদ, হুম‌কির মু‌খে জীববৈচিত্র্য
ছবি সংগৃহীত।

একটি    নাম ,  যা    দেশের    ভ্রমণপিপাসু    মানুষের    মনে    এক    অপার    ভালোলাগার    প্রতিচ্ছবি।    কাপ্তাই    লেকের    নীল    জলরাশি ,  সবুজ    পাহাড় ,  জনজাতি    সংস্কৃতি — সবকিছু    মিলিয়ে    যেন    প্রকৃতি    এখানে    নিজ    হাতে    রচনা    করেছে    এক    অনুপম    চিত্রপট।    কিন্তু    এই    সৌন্দর্যের    নগরীর    প্রবেশমুখেই    চোখে    পড়ে    এক    ভিন্ন    বাস্তবতা — এক    বিশাল    ময়লার    ভাগাড়।    দুর্গন্ধে    ভরা    সেই    জায়গাটি    যেন    রাঙামাটিকে    জানিয়ে    দিচ্ছে — পর্যটন    শহরের    পরিবেশ    রক্ষায়    আমাদের    কতটা    উদাসীনতা !

রাঙামাটির    পৌরসভার    ঢোকার    মুখেই    রাঙামা ‌ টি    বেতার    স্টেশন    সংলগ্ন    এলাকার    একটি    বিস্তীর্ণ    খোলা    জায়গায়    দীর্ঘদিন    ধরে    ফেলা    হচ্ছে    শহরের    বর্জ্য।    পৌরসভার    প্রতিদিনের    ময়লা ,  আবর্জনা    তো    আছেই ,  এর    সঙ্গে    নিয়মিত    ফেলা    হচ্ছে    হাসপাতালগুলোর    মেডিকেল    বর্জ্য ,  মৃত    পশু - পাখি ,  এমনকি    কসাইখানার    উচ্ছিষ্টও।    খোলা    আকাশের    নিচে    পড়ে    থাকা    এসব    বর্জ্য    থেকে    ছড়াচ্ছে    দুর্গন্ধ ,  জমে    থাকা    ময়লায়    জন্ম    নিচ্ছে    বিভিন্ন    রোগবাহী    মাছি ,  পোকামাকড়।

 

টানা    বৃ ‌ ষ্টি    হ ‌ লেই    এই    বর্জ্য    সরাসরি    গিয়ে    পড়ছে    কাপ্তাই    লেকের    পানিতে।    ফলে    কেবল    মানুষ    নয় ,  হুমকির    মুখে    পড়েছে    রাঙামাটির    জীববৈচিত্র্য    ও    পানিসংস্থান।    দু ‌ র্বিষহ    হ ‌ য়ে    উঠ ‌ ছে    স্থানীয়দের    জীবন।

ভুক্তভোগী    বাসিন্দা    খালেদা    আক্তার    বলেন ,  বাচ্চাদের    স্কুলে    পাঠাতে    পারি    না।    বমি    করতে    করতে    চলে    যায়।    দরজা - জানালা    সব    বন্ধ    রাখলেও    দুর্গন্ধ    ঢুকে    পড়ে    ঘরে। ”

অপর    বাসিন্দা    জীবন    চাকমা    ক্ষোভ    প্রকাশ    করে    বলেন ,  এই    জায়গাটা    শহরের    সবচেয়ে    গুরুত্বপূর্ণ    প্রবেশপথ।    অথচ    এখানেই    বানানো    হয়েছে    ভাগাড়।    এত    গন্ধ ,  এত    রোগ — ছোট    ছোট    বাচ্চারা    অসুস্থ    হয়ে    পড়ছে। ”

“ রাঙামা ‌ টি ‌ তে    ঢোকার    প ‌ থে    দুর্গ ‌ ন্ধে    গা    গু ‌ লি ‌ য়ে    উঠে।    এত    বা ‌ জে    দুর্গন্ধ !  মাথা    বের    ক ‌ রে    দে ‌ খি ,  রাস্তার    পা ‌ শেই    ময়লার    ভাগার। ” —  এমনই    প্রতিক্রিয়া    পর্যটক    মাহমুদ    খানের।    মাহমুদের    মতে , “ এক ‌ টি    পর্যটন    শহ ‌ রে    প্রবেশ    করার    মু ‌ খে    এত    ময়লা - আবর্জনা    মানায়    না।    এর    থে ‌ কে    যে    কেউ    শহ ‌ রের    পর্যটন    প ‌ রি ‌ বেশ    ধারনা    নি ‌ তে    পার ‌ বে। ”

এই    বর্জ্য    ব্যবস্থাপনা    শুধুমাত্র    দুর্গন্ধের    কারণই    নয় ,  বরং    বড়    ধরনের    স্বাস্থ্যঝুঁকি    তৈরি    করছে।    হাসপাতালের    সংক্রামক    বর্জ্য ,  ইনজেকশন ,  অপারেশন    সামগ্রী — সব    মিশে    যাচ্ছে    খোলা    মাটি    ও    কাপ্ত্ইা    হ্রদের    পা ‌ নি ‌ তে।    সেখান    থেকে    পানি    ও    বাতাসের    মাধ্যমে    ছড়িয়ে    পড়ছে    বিভিন্ন    জীবাণু।

বিশেষজ্ঞরা    বলছেন ,  এইভাবে    চলতে    থাকলে    শহরের    পানি ,  মাটি    এবং    বাতাস    চরমভাবে    দূষিত    হয়ে    পড়বে।    এর    প্রভাব    দীর্ঘমেয়াদে    জনস্বাস্থ্যের    ওপর    মারাত্মক    আকার    ধারণ    করবে।

কাপ্তাই    হ্রদে    ফেলা    হচ্ছে    নানা    ধরনের    বর্জ্য — প্লাস্টিক ,  গৃহস্থালি    আবর্জনা ,  হোটেল - রেস্তোরাঁর    ময়লা ,  এমনকি    হাসপাতা ‌ লের    বিষাক্ত    বর্জ্যও।    এতে    মারাত্মকভাবে    দূষিত    হচ্ছে    হ্রদের    পানি।    পাশাপাশি    হুমকির    মুখে    পড়েছে    হ্রদের    জৈববৈচিত্র্য।    বিষয়টি    নিয়ে    উদ্বেগ    প্রকাশ    করেছেন    রাঙামাটির    মৎস্য    গবেষণা    কেন্দ্রের    বৈজ্ঞা ‌ নিক    কর্মকর্তা    মো .  খা ‌ লেদ।

তিনি    বলেন , “ নানা    ধরনের    বর্জ্যে    কাপ্তাই    হ্রদ    ক্রমাগতভাবে    দূষিত    হচ্ছে।    এতে    শুধু    মাছ    নয় ,  হ্রদকেন্দ্রিক    সামগ্রিক    পরিবেশ    ব্যবস্থা    হুমকির    মুখে    পড়ছে।    কয়েকটি    দেশীয়    প্রজাতির    মাছ    এখন    প্রায়    বিলুপ্তির    পথে।    আমরা    যদি    এখনই    পদক্ষেপ    না    নিই ,  ভবিষ্যতে    এটি    আরও    ভয়াবহ    আকার    ধারণ    করতে    পারে। ”

রাঙামাটি    একটি    আন্তর্জাতিক    পর্যটন    শহর    হওয়ার    সম্ভাবনা    রাখে।    কিন্তু    প্রবেশপথেই    এমন    একটি    ভাগাড়    এ    শহরের    ভাবমূর্তিকে    প্রশ্নবিদ্ধ    করছে।    প্রশাসনের    সদিচ্ছা    থাকলেও    বাস্তবায়নে    গতি    নেই।    পার্বত্য    চট্টগ্রাম    নাগ ‌ রিক    প ‌ রিষ ‌ দের    সভাপ ‌ তি    মোহাম্মদ    সোলায়মান    ব ‌ লেন ,  ভাগাড়টি    অবিলম্বে    শহরের    বাইরে    নির্ধারিত    স্থানে    স্থানান্তর    করতে    হবে।হাসপাতালের    জন্য    পৃথক    বর্জ্য    নিষ্পত্তির    ব্যবস্থা    করতে    হবে।বর্জ্য    প্রক্রিয়াকরণ    প্ল্যান্ট    স্থাপন    করে    একে    সম্পদে    পরিণত    করতে    হব্।ে

রাঙামাটি    চেম্বার    অব    কমার্স    অ্যান্ড    ইন্ডাস্ট্রির    সভাপতি    অ্যাডভোকেট    মামুনুর    রশীদ    মামুন    বলেন ,  এটি    স ‌ রি ‌ য়ে    শুধু    ময়লা    ফেলে    রাখলেই    হবে    না।    এই    বর্জ্য    প্রক্রিয়াজাত    করে    আমরা    সার    তৈরি    করতে    পারি।    এতে    কৃষি    খাতে    নতুন    সম্ভাবনার    দ্বার    খুলবে। ” তার    মতে ,  আধুনিক    বর্জ্য    প্রক্রিয়াজাতকরণ    প্ল্যান্ট    স্থাপন    করলে    একদিকে    পরিবেশ    সুরক্ষিত    হবে ,  অন্যদিকে    তৈরি    হবে    নতুন    কর্মসংস্থান    ও    রাজস্ব।

পৌরসভা    সূত্র    জানায় ,  বর্জ্য    ব্যবস্থাপনা    উন্নয়নের    জন্য    শুকুরছড়ির    ত্রিদিব    নগরে    ডাম্পিং    স্টেশন    নির্মাণের    পরিকল্পনা    ছিল    পৌরসভার।    প্রকল্পের    সম্ভাব্য    স্থান    নির্বাচনের    আগেই    এই    খবর    পেয়ে    যায়    পৌরসভার    একাধিক    কর্মকর্তা - কর্মচারী    জড়িত    একটি    চক্র।

এরপরই    তারা    স্থানীয়    এক    বাসিন্দা    অনির্বাণ    চাকমার    কাছ    থেকে    ৩য়    শ্রেণির    পাহাড়ি    চার    একর    জমি    মাত্র    ১০    লাখ    টাকায়    কিনে    নেয়।    উল্লেখযোগ্য    বিষয় ,  জমিটি    শহর    থেকে    প্রায়    ১৬    কিলোমিটার    দূরে ,  যেখানে    পরিবহনেরও    সুপরিকল্পিত    ব্যবস্থা    নেই।

পরবর্তীতে    স্থানীয়    সরকার    মন্ত্রণালয়    থেকে    প্রকল্পের    জন্য    জমি    ক্রয়ের    অনুমতিপত্র    আসার    সঙ্গে    সঙ্গে    সেই    জমিই    চার    কোটি    ৩৭    লাখ    ৩০    হাজার    ২৪৫    টাকায়    পৌরসভাকে    বিক্রি    করে    দেওয়া    হয়।    এর    ফলে    জমি    কেনাবেচার    দামের    ফাঁকে    চার    কোটি    ২২    লাখ    টাকার    বেশি    রাষ্ট্রীয়    অর্থ    হাতিয়ে    নেওয়া    হয়    বলেই    অভিযোগ    র ‌ য়ে ‌ ছে।    প ‌ রি ‌ বেশ    বিপর্য ‌ য়ের    হুম ‌ কি ‌ তে    স্থানীয় ‌ দের    আন্দোল ‌ নের    মু ‌ খে    ওই    প্রকল্প    মুখ    থুব ‌ ড়ে    প ‌ ড়ে।   

 

রাঙামাটি    পৌরসভা    প্রশাসক    মোহাম্মদ    মোবারক    হোসেন    জানান ,  ডাম্পিং    স্টেশনের    বিষয়টি    আমাদের    নজরে    এসেছে।    ইতোমধ্যে    মাসিক    সভায়    আলোচনা    হয়েছে।    উপযুক্ত    জায়গা    খুঁজে    পেলে    দ্রুত    এই    ভাগাড়    সরিয়ে    ফেলা    হবে। ”    তিনি    আরও    বলেন ,  আধুনিক    বর্জ্য    ব্যবস্থাপনার    জন্য    প্রকল্প    হাতে    নেয়া    হচ্ছে ,  যেখানে    ময়লা    থেকে    সার    ও    জ্বালানি    উৎপাদনের    চিন্তাও    রয়েছে।

পর্যটন    রাঙামাটি    শুধুই    প্রাকৃতিক    সৌন্দর্যের    শহর    নয় ,  এটি    এখানকার    মানুষের    জীবনযাপন ,  সংস্কৃতি    এবং    ভবিষ্যতের    সম্ভাবনার    প্রতীক।    প্রবেশমুখেই    যখন    একটি    নগরীর    পরিচয়    হয় ,  তখন    সেটি    পরিচ্ছন্ন    ও    মনোরম    হওয়া    উচিত।    আর    সেই    দায়িত্ব    পৌরসভা    ও    স্থানীয়    প্রশাসনের।    সময়    এসেছে    দ্রুত    এবং    কার্যকর    সিদ্ধান্ত    নেয়ার — অন্যথায়    রাঙামাটি    শুধু    দুর্গন্ধ    নয় ,  হারাবে    তার    স্বপ্নের    বৈভবও।

 




Ads

দুর্নীতির মহা দুর্গ বান্দরবান গণপূর্ত বিভাগ

দুর্নীতির মহা দুর্গ বান্দরবান গণপূর্ত বিভাগ
ছবি সংগৃহীত।


বান্দরবান গণপূর্ত বিভাগে বছরজুড়ে চলা উন্নয়ন প্রকল্পগুলো এখন কিছু প্রভাবশালী ঠিকাদার ও কর্মকর্তার নিয়ন্ত্রণে। একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট দরপত্র বাণিজ্যের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে সরকারের বিপুল অর্থ বরাদ্দের বড় অংশ চলে যাচ্ছে কমিশন ও ভাগাভাগির খেলায়। এতে প্রকল্পের গুণগত মান যেমন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে, তেমনি উন্নয়ন কার্যক্রমে তৈরি হচ্ছে বৈষম্য।
২০১৯-২০২৫  এই ৫ বছরে বিভাগের অধীনে প্রায় ১০০টি উন্নয়ন প্রকল্পের টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এর মধ্যে মাত্র কয়েকটি প্রকল্প এলটিএম (সীমিত দরপত্র পদ্ধতি) মাধ্যমে উন্মুক্ত লটারি পদ্ধতিতে আহ্বান করা হয়। বাকি অধিকাংশ প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করা হয় ওটিএম (ওপেন টেন্ডার পদ্ধতি) ও ওএসটিএম (ওয়ান স্টেজ টু এনভেলপ) কোটেশন পদ্ধতিতে, যেখানে নিয়ম ভেঙে কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ভাগ করে দেওয়া হয় কাজ।
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ২০২৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর থেকে দায়িত্ব পালন করা নির্বাহী প্রকৌশলী অভিজিৎ চৌধুরীর সময়েই সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য ভয়াবহ রূপ নেয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি পছন্দের ঠিকাদারদের কাছে দরপত্রের নির্ধারিত দর (রেইট কোড) ফাঁস করে দেন, যাতে তারা নির্দিষ্ট দামে দরপত্র জমা দিয়ে সহজেই কাজ পেয়ে যান। এ সুযোগে সাধারণ ঠিকাদাররা দরপত্র কিনেও কোনো কাজ পান না।
আরও অভিযোগ, ঠিকাদারদের কাছ থেকে নির্ধারিত দামে কাজ পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে ৪% থেকে ৮% পর্যন্ত কমিশন আদায় করেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা। এ কমিশনের অংশ সিন্ডিকেটের মধ্যেই ভাগ হয়।
সিন্ডিকেটের বাইরে থাকা ঠিকাদাররা দাবি করেন, তারা নির্ধারিত দামের চেয়ে কম মূল্যে উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নে প্রস্তুত থাকলেও তাদেরকে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে দরপত্র জমা না দেওয়ার জন্য বাধ্য করা হয়। অনেক সময় ‘কাজ পেলে কীভাবে টিকবে’ সে সম্পর্কেও স্পষ্ট হুমকি দেওয়া হয়।
অভিযোগের তীর মূলত  আওয়ামীলীগরে দূসর ও বীর বাহাদুররে আস্তাভাজন হসিবেে পরচিতি ঠিকাদার রোটারিয়ান মো. ফারুক চৌধুরীর দিকে। তার মালিকানাধীন মেসার্স রয়েল অ্যাসোসিয়েটস, ইউটিমং, এস. অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা, মেরিনা কনস্ট্রাকশনসহ একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ব্যবহার করে তিনি একাই একাধিক প্রকল্পের কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন। ২০১৯-২৫ শতাধকি  প্রকল্পের মধ্যে অধকিাংশ লাভজনক কাজ বাস্তবায়ন করেছেন তিনি, আর বাকিগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি কাজ পেয়েছেন তার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা।
তবে অভিযোগকারীদের দাবি, নির্ধারিত দরের তুলনায় কমদামে কাজ দিতে চাইলেও সুযোগ দেওয়া হয় না, কারণ সিন্ডিকেটের বাইরে থাকা ঠিকাদাররা তদবির ও ঘুষ দেওয়ার প্রতিযোগিতায় টিকতে পারেন না। ফলে সাধারণ নির্মাণ কোম্পানিগুলোর পক্ষে এখন বান্দরবানে সরকারি কাজ পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে।
সব মিলিয়ে বান্দরবানে গণপূর্ত বিভাগের ভাবমূর্তি এখন সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রিত এক দুর্নীতির দুর্গ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠছে, যার পরিণতি ভোগ করছে সরকারি অর্থ ও সাধারণ জনগণ।
গণপূর্ত বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী স্বপন কুমার দাস বলেন, ‘লাইসেন্স যাচাই করে কাজের আদেশ দেওয়া হয়। একই লাইসেন্সে একাধিক কাজ পেলে তাতে আমাদের কিছু করার থাকে না। তবে যদি কেউ দরপত্রের তথ্য ফাঁস করে থাকে, সেটি অন্যায়।’

 




Ads

অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়া বান্দরবান বন বিভাগ!

অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়া বান্দরবান বন বিভাগ!
বৃক্ষহীন হয়ে পড়েছে সাঙ্গু ফরেস্ট।

 

৮৫ হাজার একর বিশাল বনভূমির সাঙ্গু রিজার্ভ রক্ষায় নিযুক্ত আছেন মাত্র একজন ফরেস্টার, একজন গার্ড এবং একজন বাগান মালী—মোটে তিনজন। অথচ এই বিশাল বনভূমির জন্য দায়িত্বরত থানচি রেঞ্জে প্রয়োজনীয় জনবল সংকটে বন রক্ষার কার্যক্রম প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে। বিপরীতে, সদর রেঞ্জে কোনো সংরক্ষিত বনভূমি না থাকা সত্ত্বেও কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ৩০ থেকে ৪০ জন!

বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আব্দুর রহমানের বিতর্কিত নীতি
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বান্দরবান বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুর রহমান নিজস্ব সিদ্ধান্তে জনবল বণ্টনে ব্যাপক বৈষম্য করেছেন। সংরক্ষিত বনবিহীন সদর রেঞ্জে অতিরিক্ত সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী পদায়ন করে, বন রক্ষা নয় বরং জোত পারমিট ও কাঠ পাচারের ‘টিপি ব্যবসা’কে গুরুত্ব দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

কাজ নয়, বিলাসে কাটছে সদর রেঞ্জ কর্মকর্তাদের সময়
বর্তমানে সদর রেঞ্জে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বান্দরবান শহরে অবস্থান করে বিলাসী জীবনযাপন করছেন। বন রক্ষা বা বাস্তবিক কোনো দায়িত্ব না থাকলেও সরকারি সুবিধা ও ভাতা গ্রহণ করে যাচ্ছেন নির্ধারিত জনবল।

অনিয়মের অভিযোগে অভিযুক্ত ফরেস্ট গার্ড নাসিরুল
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ফরেস্ট গার্ড নাসিরুল আলমের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্তি। নিয়মবহির্ভূতভাবে তাকে সেকদু রেঞ্জ থেকে সরিয়ে সদর রেঞ্জে পদায়ন করা হয়েছে। অথচ তার বিরুদ্ধে রয়েছে নারী কেলেঙ্কারি, চাঁদাবাজি, ও দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে পূর্বেও এসব বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলেও বন বিভাগের চট্টগ্রাম অঞ্চলের এক প্রভাবশালী কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে সব অভিযোগ ধামাচাপা পড়ে যায় বলে জানা যায়।

অভিযোগ বিষয়ে নাসিরুল আলম বলেন, “এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। আগে অনেক নিউজ হয়েছে, তাতে আমার কিছু যায়-আসে না। বড় সাহেবদের যায় আসে, আমার না।” — তার এই দাম্ভিক মন্তব্যেই বোঝা যায়, পূর্বের অভিযোগে শাস্তি না হওয়ায় তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।

সদর রেঞ্জে ফরেস্ট রেঞ্জার নিয়োগেও আর্থিক লেনদেনের গুঞ্জন
বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, আগামী ১৪ আগস্ট সদর রেঞ্জের বর্তমান রেঞ্জ কর্মকর্তা শামসুল হকের অবসরোত্তর ছুটিতে যাওয়ার সুযোগে বিশাল অংকের লেনদেনের মাধ্যমে ফরেস্ট রেঞ্জার রিয়াজ রহমানকে ওই পদে পদায়নের পরিকল্পনা রয়েছে।
এই পদায়নে ডিএফও আব্দুর রহমানের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ভূমিকা রেখেছেন অফিস সহকারী সুশান্ত কুমার সরকার এবং খ্যায়াচলং রেঞ্জ অফিসার জয়ন্ত রায়। উল্লেখ্য, এই তিনজন পূর্বে কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগে একত্রে কর্মরত ছিলেন এবং সেখানেও তাদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ ছিল।

পরিবেশবাদীদের উদ্বেগ ও প্রস্তাব
পরিবেশবাদী ও সচেতন মহল মনে করেন, সংরক্ষিত বনভূমি রক্ষায় রেঞ্জভিত্তিক জনবল বণ্টনের ভারসাম্য জরুরি। বিশেষ করে থানচি রেঞ্জে অন্তত একজন ফরেস্ট রেঞ্জার এবং ১০ জন স্টাফ নিযুক্ত করা প্রয়োজন। অন্যদিকে, সদর রেঞ্জে এত বিপুল জনবলের কোনো প্রয়োজন নেই।

ডিএফও-র বক্তব্য মিলেনি
এই সব অভিযোগ ও জনবল বণ্টনের বৈষম্য নিয়ে ডিএফও আব্দুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল ফোনে সাড়া পাওয়া যায়নি। ফলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।




Ads

রাঙামাটিতে বন ফরেষ্ট রেইঞ্জার মামুনুর রহমানের অভিযোগের পাহাড়

রাঙামাটিতে বন ফরেষ্ট রেইঞ্জার মামুনুর রহমানের অভিযোগের পাহাড়
ছবি সংগৃহীত।

পার্বত্য চট্টগ্রামের দক্ষিণ বন বিভাগের কর্ণফুলী ও বরকল স্টেশনে দায়িত্ব পালনকারী বন কর্মকর্তা মো. মামুনুর রহমানের বিরুদ্ধে কোটি টাকার কাঠ পাচার, ভুয়া পারমিট ইস্যু এবং ঘুষের বিনিময়ে পোস্টিংয়ের মতো ভয়াবহ দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ক্ষমতাসীন দলের উচ্চ পর্যায়ের তদবিরের মাধ্যমে রাঙামাটির গুরুত্বপূর্ণ পোস্টে নিয়োগ পান মামুনুর রহমান। এরপর থেকে একের পর এক প্রভাবশালী ও ‘লাভজনক’ পোস্টে বদলি হয়ে তিনি অল্প সময়ের মধ্যেই গড়ে তোলেন বিপুল অবৈধ সম্পদের পাহাড়।
প্রথমে কর্ণফুলী রেঞ্জে দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি ঐতিহাসিক ১৯২৭ সালের সেগুন বাগান ঘিরে চক্র গড়ে তোলেন। কাপ্তাই মুখ বিট কর্মকর্তার সঙ্গে মিলে মা সেগুন গাছ কেটে নদীপথে পাচার করে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মাত্র এক বছরের মাথায়, চাকরির নীতিমালা লঙ্ঘন করে, তৎকালীন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা শোয়াইব খানের মাধ্যমে ঘুষের বিনিময়ে (আনুমানিক ১০–১৫ লাখ টাকা) তাকে বরকল স্টেশনে বদলি করা হয়।
বরকল স্টেশনে গিয়ে মামুনুর রহমান আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। স্থানীয় সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা ‘জোত পারমিট’ পদ্ধতি ফের চালু করেন তিনি এবং এই ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে গড়ে তোলেন কাঠ পাচারের বিশাল সিন্ডিকেট। বরকল স্টেশন থেকে ইস্যু করা জোত পারমিটে যে পরিমাণ গাছের অনুমতি দেওয়া হয়, বাস্তবে সংশ্লিষ্ট জমিতে তারচেয়েও অনেক কম গাছ থাকে। ফলে ভারত থেকে চোরাই পথে আনা সেগুন কাঠ এই পারমিটের কাঠ হিসেবে সমন্বয় করে বাংলাদেশে বৈধতা দেওয়া হয়।
শুধু তাই নয়, বরকল স্টেশন ছাড়াও কর্ণফুলী রেঞ্জের কাউইমুখ বিট এবং রাঙামাটির অন্যান্য সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে নিয়মিত গাছ কেটে নদীপথ ও সড়কপথে কাঠ সরবরাহ করা হয় রাঙামাটির বিভিন্ন স’মিলে। আসামবস্তি, রাজবাড়ী, কিসারিয়াহাটসহ একাধিক এলাকায় এসব কাঠ পৌঁছায় বরকল স্টেশনের ডি-ফরম ব্যবহার করে। এভাবে সংরক্ষিত বনের কাঠ জোত কাঠের সঙ্গে মিশিয়ে হেমার নেওয়ার মাধ্যমে বৈধ করা হয়।

অভিযোগ রয়েছে, বরকল স্টেশনের ডি-ফরমে যেভাবে কাঠের হিসাব দেখানো হয়, বাস্তবে তারচেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ কাঠ মজুদ ও পাচার করা হয়। এসব কাঠের বেশিরভাগই সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে কাটা, যা জোতের কাঠ হিসেবে কাগজে দেখানো হয়। এই পুরো চক্রে রাঙামাটি বন বিভাগের ফিল্ড লেভেলের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, নির্ধারিত উৎকোচের বিনিময়ে ‘উপ-টু-রুট’ সবাইকে ভাগ দেওয়া হয়। ফলে সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে নির্বিঘ্নে কাজ করে যাচ্ছে।
এ নিয়ে রাঙামাটি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কার্যালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
স্থানীয় প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা অনিয়ম সম্পর্কে অবগত থাকার কথা স্বীকার করলেও প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলতে রাজি হননি। জনমনে প্রশ্ন—দুর্নীতির পাহাড় গড়ে তোলা এই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কবে হবে কার্যকর ব্যবস্থা? আর কতদিন প্রশাসনের নাকের ডগায় দিনের আলোয় ধ্বংস হবে শত বছরের প্রাকৃতিক বনভূমি?
এ বিষয়ে কর্ণফুলী রেঞ্জ কর্মকর্তা  বরকল ্টেশন  অফিসার মামুনকে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। তবে ভিন্ন সুত্রে তিনি দৈনিক সাঙ্গুকে বলেন তিনি ষড়যন্ত্রেও শিকার। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সঠিক নয়।
 



দৈনিক সাম্পান

Latest News

ক্যাটাগরি