Ads

বান্দরবানে কাঠ পাচারের গডফাদার ‘ল্যাডা জাহাঙ্গীর’

বান্দরবানে কাঠ পাচারের গডফাদার ‘ল্যাডা জাহাঙ্গীর’
সাবেক মন্ত্রি বীর বাহাদুরের সাথে ‘ল্যাডা জাহাঙ্গীর’

বান্দরবানের আলোচিত কাঠ ব্যবসায়ী ও বান্দরবান কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ওরফে ‘ল্যাডা জাহাঙ্গীর’-এর বিরুদ্ধে উঠে এসেছে বন লুট, কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন, কর ফাঁকি ও চাঁদাবাজির গুরুতর অভিযোগ।
এক যুগেরও বেশি সময় ধরে সাঙ্গু রিজার্ভ ফরেস্ট থেকে কাঠ পাচারের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। ২০০৭ সালের এক-এগারো সরকারের সময় তার বিরুদ্ধে প্রথম কাঠ পাচারের অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে। অভিযোগ আছে, সেই ২০০৮সাল থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী বীর বাহাদুরের চত্রছায়ায় এখন পর্যন্ত তিনি বান্দরবানে কাঠের রাজ্যে একক আধিপত্য ধরে  রেখেছেন।
জানা গেছে, বন থেকে কাঠ পাচার করে তিনি গড়ে তুলেছেন শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের পাহাড়। বান্দরবানে চৌধুরী মার্কেট এলাকায় গড়ে তুলেছেন বহুতল বিশিষ্ট বিলাসবহুল হক হিল টাওয়ার নামে একটি মার্কেট। শহরের বনরূপা, বিভিন্নস্থানে তার নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে রয়েছে একাধিক ভবন ও জমি। ক্ষমতাসীনদের নাম ব্যবহার করে 
কাঠবাহী প্রতিটি ট্রাক থেকে প্রতি রাতেই আদায় করা হয় ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা করে। এসব টাকার অংশ যায় স্থানীয় বন বিভাগের কর্মকর্তা, পুলিশ ও বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তরে। ফলে কালো টাকার ব্যবহার ও ক্ষমতাসীনদের আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ার কারণে বছরের পর বছর কোনো অভিযানেই ধরা পড়েননি ল্যাড়া জাহাঙ্গীর। বরং তার নামেই গড়ে উঠেছে একটি ‘অঘোষিত অবৈধ কাঠ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের সিন্ডিকেট’।
স্থানীয়রা জানান, প্রশাসনের ছত্রছায়ায় জাহাঙ্গীর প্রতিনিয়ত বন উজাড় করে আসছেন। কেউ প্রতিবাদ করলে শুরু হয় হয়রানি। বন্ধ করে দেয়া হয় অভিযোগকারী ব্যবসায়ীর বৈধ গাড়ি লোডিং। বান্দরবানের উভয় বন বিভাগ যেন তার অধীনস্থ একটা অফিস। অবৈধ ব্যবসার আঁড়ালে জোত ব্যবসার ডি-ফরম লিখা, লকবই লিখা, নোটশীটের কাজ সব কাজই সরকারি বন বিভাগের কর্মকর্তাদের করার নিয়ম থাকলেও জাহাঙ্গীর এই সবকাজ নিজের লোক দিয়ে তার সুবিধা মতো করান। যাতে অবাধে তার কাঠ পাচার অব্যাহত হবে। বন বিভাগের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে এই অবৈধ সুবিধা পান তিনি।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডের অন্যতম অর্থায়নকারী হিসেবে পরিচিত। বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগের অধিকাংশ সভা-সমাবেশে আর্থিক সহায়তা আসে তার কাছ থেকেই। মন্ত্রীর আস্থায় থাকার জন্য দুহাতে ব্যয় করেছেন বান্দরবান জেলা কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির সিংহভাগ টাকা।
অভিযোগ আছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় তিনি ছাত্রলীগের একাংশকে উসকানি দেন আন্দোলন দমন করতে এবং তৎকালীন বঙ্গবন্ধু মুক্তমঞ্চে ৩দিন দুপুরের খাবারের যোগান দেন। এছাড়া জেলা কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির সর্বশেষ নির্বাচনেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ভোটারদের ভোটের ছবি তুলতে বাধ্য করেছেন। তা না হলে ব্যবসা বন্ধের হুমকি দিয়েছেন। বিএনপির এক স্থানীয় প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে আঁতাত করে তিনি আবারও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
অর্থ লোপাট, অবৈধ লেনদেন ও সদস্যদের মতামত উপেক্ষার একাধিক লিখিত অভিযোগ সমিতিতে দাখিল হয়েছে। সমিতির তহবিলের নিরীক্ষা দীর্ঘদিন ধরে হয়নি।
তবে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো, এত বিশাল সম্পদের মালিক হওয়া সত্ত্বেও জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী নিয়মিত কর দেন না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যমতে, তার আয়কর রিটার্নে উল্লেখ করা সম্পদ তার বাস্তব সম্পদের একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। গত পাঁচ বছরে তিনি যে পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন, তার কোনও বৈধ উৎস দেখাতে পারেননি।
সরকার একাধিকবার দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালনার ঘোষণা দিলেও জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর মতো প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেই। বরং স্থানীয় রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সুরক্ষা থাকার কারণে তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এবং বন অধিকার নিয়ে কাজ করা একাধিক সংগঠন এই বিষয়ে হাইকোর্টে রিট দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে। তারা বলছে, একটি বিশেষ সিন্ডিকেটের আশ্রয়ে বান্দরবানে প্রাকৃতিক সম্পদ হরণ চলছে, যার মূল হোতা এই জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
এদিকে বন অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে প্রশাসনের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “উপরের চাপ না এলে জাহাঙ্গীরদের কিছু করা যায় না।”
এই বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলমের বক্তব্য জানাতে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ভাই আমি কোথায় চাঁদাবাজি করলাম, কর ফাঁকি দিলাম,আমি অবৈধ সম্পদ  কোথায় অর্জন করলাম জানিনা।
 




Ads

দুর্নীতির মহা দুর্গ বান্দরবান গণপূর্ত বিভাগ

দুর্নীতির মহা দুর্গ বান্দরবান গণপূর্ত বিভাগ
ছবি সংগৃহীত।


বান্দরবান গণপূর্ত বিভাগে বছরজুড়ে চলা উন্নয়ন প্রকল্পগুলো এখন কিছু প্রভাবশালী ঠিকাদার ও কর্মকর্তার নিয়ন্ত্রণে। একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট দরপত্র বাণিজ্যের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে সরকারের বিপুল অর্থ বরাদ্দের বড় অংশ চলে যাচ্ছে কমিশন ও ভাগাভাগির খেলায়। এতে প্রকল্পের গুণগত মান যেমন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে, তেমনি উন্নয়ন কার্যক্রমে তৈরি হচ্ছে বৈষম্য।
২০১৯-২০২৫  এই ৫ বছরে বিভাগের অধীনে প্রায় ১০০টি উন্নয়ন প্রকল্পের টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এর মধ্যে মাত্র কয়েকটি প্রকল্প এলটিএম (সীমিত দরপত্র পদ্ধতি) মাধ্যমে উন্মুক্ত লটারি পদ্ধতিতে আহ্বান করা হয়। বাকি অধিকাংশ প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করা হয় ওটিএম (ওপেন টেন্ডার পদ্ধতি) ও ওএসটিএম (ওয়ান স্টেজ টু এনভেলপ) কোটেশন পদ্ধতিতে, যেখানে নিয়ম ভেঙে কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ভাগ করে দেওয়া হয় কাজ।
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ২০২৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর থেকে দায়িত্ব পালন করা নির্বাহী প্রকৌশলী অভিজিৎ চৌধুরীর সময়েই সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য ভয়াবহ রূপ নেয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি পছন্দের ঠিকাদারদের কাছে দরপত্রের নির্ধারিত দর (রেইট কোড) ফাঁস করে দেন, যাতে তারা নির্দিষ্ট দামে দরপত্র জমা দিয়ে সহজেই কাজ পেয়ে যান। এ সুযোগে সাধারণ ঠিকাদাররা দরপত্র কিনেও কোনো কাজ পান না।
আরও অভিযোগ, ঠিকাদারদের কাছ থেকে নির্ধারিত দামে কাজ পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে ৪% থেকে ৮% পর্যন্ত কমিশন আদায় করেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা। এ কমিশনের অংশ সিন্ডিকেটের মধ্যেই ভাগ হয়।
সিন্ডিকেটের বাইরে থাকা ঠিকাদাররা দাবি করেন, তারা নির্ধারিত দামের চেয়ে কম মূল্যে উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নে প্রস্তুত থাকলেও তাদেরকে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে দরপত্র জমা না দেওয়ার জন্য বাধ্য করা হয়। অনেক সময় ‘কাজ পেলে কীভাবে টিকবে’ সে সম্পর্কেও স্পষ্ট হুমকি দেওয়া হয়।
অভিযোগের তীর মূলত  আওয়ামীলীগরে দূসর ও বীর বাহাদুররে আস্তাভাজন হসিবেে পরচিতি ঠিকাদার রোটারিয়ান মো. ফারুক চৌধুরীর দিকে। তার মালিকানাধীন মেসার্স রয়েল অ্যাসোসিয়েটস, ইউটিমং, এস. অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা, মেরিনা কনস্ট্রাকশনসহ একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ব্যবহার করে তিনি একাই একাধিক প্রকল্পের কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন। ২০১৯-২৫ শতাধকি  প্রকল্পের মধ্যে অধকিাংশ লাভজনক কাজ বাস্তবায়ন করেছেন তিনি, আর বাকিগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি কাজ পেয়েছেন তার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা।
তবে অভিযোগকারীদের দাবি, নির্ধারিত দরের তুলনায় কমদামে কাজ দিতে চাইলেও সুযোগ দেওয়া হয় না, কারণ সিন্ডিকেটের বাইরে থাকা ঠিকাদাররা তদবির ও ঘুষ দেওয়ার প্রতিযোগিতায় টিকতে পারেন না। ফলে সাধারণ নির্মাণ কোম্পানিগুলোর পক্ষে এখন বান্দরবানে সরকারি কাজ পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে।
সব মিলিয়ে বান্দরবানে গণপূর্ত বিভাগের ভাবমূর্তি এখন সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রিত এক দুর্নীতির দুর্গ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠছে, যার পরিণতি ভোগ করছে সরকারি অর্থ ও সাধারণ জনগণ।
গণপূর্ত বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী স্বপন কুমার দাস বলেন, ‘লাইসেন্স যাচাই করে কাজের আদেশ দেওয়া হয়। একই লাইসেন্সে একাধিক কাজ পেলে তাতে আমাদের কিছু করার থাকে না। তবে যদি কেউ দরপত্রের তথ্য ফাঁস করে থাকে, সেটি অন্যায়।’

 




Ads

অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়া বান্দরবান বন বিভাগ!

অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়া বান্দরবান বন বিভাগ!
বৃক্ষহীন হয়ে পড়েছে সাঙ্গু ফরেস্ট।

 

৮৫ হাজার একর বিশাল বনভূমির সাঙ্গু রিজার্ভ রক্ষায় নিযুক্ত আছেন মাত্র একজন ফরেস্টার, একজন গার্ড এবং একজন বাগান মালী—মোটে তিনজন। অথচ এই বিশাল বনভূমির জন্য দায়িত্বরত থানচি রেঞ্জে প্রয়োজনীয় জনবল সংকটে বন রক্ষার কার্যক্রম প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে। বিপরীতে, সদর রেঞ্জে কোনো সংরক্ষিত বনভূমি না থাকা সত্ত্বেও কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ৩০ থেকে ৪০ জন!

বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আব্দুর রহমানের বিতর্কিত নীতি
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বান্দরবান বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুর রহমান নিজস্ব সিদ্ধান্তে জনবল বণ্টনে ব্যাপক বৈষম্য করেছেন। সংরক্ষিত বনবিহীন সদর রেঞ্জে অতিরিক্ত সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী পদায়ন করে, বন রক্ষা নয় বরং জোত পারমিট ও কাঠ পাচারের ‘টিপি ব্যবসা’কে গুরুত্ব দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

কাজ নয়, বিলাসে কাটছে সদর রেঞ্জ কর্মকর্তাদের সময়
বর্তমানে সদর রেঞ্জে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বান্দরবান শহরে অবস্থান করে বিলাসী জীবনযাপন করছেন। বন রক্ষা বা বাস্তবিক কোনো দায়িত্ব না থাকলেও সরকারি সুবিধা ও ভাতা গ্রহণ করে যাচ্ছেন নির্ধারিত জনবল।

অনিয়মের অভিযোগে অভিযুক্ত ফরেস্ট গার্ড নাসিরুল
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ফরেস্ট গার্ড নাসিরুল আলমের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্তি। নিয়মবহির্ভূতভাবে তাকে সেকদু রেঞ্জ থেকে সরিয়ে সদর রেঞ্জে পদায়ন করা হয়েছে। অথচ তার বিরুদ্ধে রয়েছে নারী কেলেঙ্কারি, চাঁদাবাজি, ও দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে পূর্বেও এসব বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলেও বন বিভাগের চট্টগ্রাম অঞ্চলের এক প্রভাবশালী কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে সব অভিযোগ ধামাচাপা পড়ে যায় বলে জানা যায়।

অভিযোগ বিষয়ে নাসিরুল আলম বলেন, “এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। আগে অনেক নিউজ হয়েছে, তাতে আমার কিছু যায়-আসে না। বড় সাহেবদের যায় আসে, আমার না।” — তার এই দাম্ভিক মন্তব্যেই বোঝা যায়, পূর্বের অভিযোগে শাস্তি না হওয়ায় তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।

সদর রেঞ্জে ফরেস্ট রেঞ্জার নিয়োগেও আর্থিক লেনদেনের গুঞ্জন
বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, আগামী ১৪ আগস্ট সদর রেঞ্জের বর্তমান রেঞ্জ কর্মকর্তা শামসুল হকের অবসরোত্তর ছুটিতে যাওয়ার সুযোগে বিশাল অংকের লেনদেনের মাধ্যমে ফরেস্ট রেঞ্জার রিয়াজ রহমানকে ওই পদে পদায়নের পরিকল্পনা রয়েছে।
এই পদায়নে ডিএফও আব্দুর রহমানের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ভূমিকা রেখেছেন অফিস সহকারী সুশান্ত কুমার সরকার এবং খ্যায়াচলং রেঞ্জ অফিসার জয়ন্ত রায়। উল্লেখ্য, এই তিনজন পূর্বে কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগে একত্রে কর্মরত ছিলেন এবং সেখানেও তাদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ ছিল।

পরিবেশবাদীদের উদ্বেগ ও প্রস্তাব
পরিবেশবাদী ও সচেতন মহল মনে করেন, সংরক্ষিত বনভূমি রক্ষায় রেঞ্জভিত্তিক জনবল বণ্টনের ভারসাম্য জরুরি। বিশেষ করে থানচি রেঞ্জে অন্তত একজন ফরেস্ট রেঞ্জার এবং ১০ জন স্টাফ নিযুক্ত করা প্রয়োজন। অন্যদিকে, সদর রেঞ্জে এত বিপুল জনবলের কোনো প্রয়োজন নেই।

ডিএফও-র বক্তব্য মিলেনি
এই সব অভিযোগ ও জনবল বণ্টনের বৈষম্য নিয়ে ডিএফও আব্দুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল ফোনে সাড়া পাওয়া যায়নি। ফলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।




Ads

রাঙামাটিতে বন ফরেষ্ট রেইঞ্জার মামুনুর রহমানের অভিযোগের পাহাড়

রাঙামাটিতে বন ফরেষ্ট রেইঞ্জার মামুনুর রহমানের অভিযোগের পাহাড়
ছবি সংগৃহীত।

পার্বত্য চট্টগ্রামের দক্ষিণ বন বিভাগের কর্ণফুলী ও বরকল স্টেশনে দায়িত্ব পালনকারী বন কর্মকর্তা মো. মামুনুর রহমানের বিরুদ্ধে কোটি টাকার কাঠ পাচার, ভুয়া পারমিট ইস্যু এবং ঘুষের বিনিময়ে পোস্টিংয়ের মতো ভয়াবহ দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ক্ষমতাসীন দলের উচ্চ পর্যায়ের তদবিরের মাধ্যমে রাঙামাটির গুরুত্বপূর্ণ পোস্টে নিয়োগ পান মামুনুর রহমান। এরপর থেকে একের পর এক প্রভাবশালী ও ‘লাভজনক’ পোস্টে বদলি হয়ে তিনি অল্প সময়ের মধ্যেই গড়ে তোলেন বিপুল অবৈধ সম্পদের পাহাড়।
প্রথমে কর্ণফুলী রেঞ্জে দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি ঐতিহাসিক ১৯২৭ সালের সেগুন বাগান ঘিরে চক্র গড়ে তোলেন। কাপ্তাই মুখ বিট কর্মকর্তার সঙ্গে মিলে মা সেগুন গাছ কেটে নদীপথে পাচার করে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মাত্র এক বছরের মাথায়, চাকরির নীতিমালা লঙ্ঘন করে, তৎকালীন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা শোয়াইব খানের মাধ্যমে ঘুষের বিনিময়ে (আনুমানিক ১০–১৫ লাখ টাকা) তাকে বরকল স্টেশনে বদলি করা হয়।
বরকল স্টেশনে গিয়ে মামুনুর রহমান আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। স্থানীয় সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা ‘জোত পারমিট’ পদ্ধতি ফের চালু করেন তিনি এবং এই ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে গড়ে তোলেন কাঠ পাচারের বিশাল সিন্ডিকেট। বরকল স্টেশন থেকে ইস্যু করা জোত পারমিটে যে পরিমাণ গাছের অনুমতি দেওয়া হয়, বাস্তবে সংশ্লিষ্ট জমিতে তারচেয়েও অনেক কম গাছ থাকে। ফলে ভারত থেকে চোরাই পথে আনা সেগুন কাঠ এই পারমিটের কাঠ হিসেবে সমন্বয় করে বাংলাদেশে বৈধতা দেওয়া হয়।
শুধু তাই নয়, বরকল স্টেশন ছাড়াও কর্ণফুলী রেঞ্জের কাউইমুখ বিট এবং রাঙামাটির অন্যান্য সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে নিয়মিত গাছ কেটে নদীপথ ও সড়কপথে কাঠ সরবরাহ করা হয় রাঙামাটির বিভিন্ন স’মিলে। আসামবস্তি, রাজবাড়ী, কিসারিয়াহাটসহ একাধিক এলাকায় এসব কাঠ পৌঁছায় বরকল স্টেশনের ডি-ফরম ব্যবহার করে। এভাবে সংরক্ষিত বনের কাঠ জোত কাঠের সঙ্গে মিশিয়ে হেমার নেওয়ার মাধ্যমে বৈধ করা হয়।

অভিযোগ রয়েছে, বরকল স্টেশনের ডি-ফরমে যেভাবে কাঠের হিসাব দেখানো হয়, বাস্তবে তারচেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ কাঠ মজুদ ও পাচার করা হয়। এসব কাঠের বেশিরভাগই সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে কাটা, যা জোতের কাঠ হিসেবে কাগজে দেখানো হয়। এই পুরো চক্রে রাঙামাটি বন বিভাগের ফিল্ড লেভেলের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, নির্ধারিত উৎকোচের বিনিময়ে ‘উপ-টু-রুট’ সবাইকে ভাগ দেওয়া হয়। ফলে সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে নির্বিঘ্নে কাজ করে যাচ্ছে।
এ নিয়ে রাঙামাটি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কার্যালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
স্থানীয় প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা অনিয়ম সম্পর্কে অবগত থাকার কথা স্বীকার করলেও প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলতে রাজি হননি। জনমনে প্রশ্ন—দুর্নীতির পাহাড় গড়ে তোলা এই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কবে হবে কার্যকর ব্যবস্থা? আর কতদিন প্রশাসনের নাকের ডগায় দিনের আলোয় ধ্বংস হবে শত বছরের প্রাকৃতিক বনভূমি?
এ বিষয়ে কর্ণফুলী রেঞ্জ কর্মকর্তা  বরকল ্টেশন  অফিসার মামুনকে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। তবে ভিন্ন সুত্রে তিনি দৈনিক সাঙ্গুকে বলেন তিনি ষড়যন্ত্রেও শিকার। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সঠিক নয়।
 



দৈনিক সাম্পান

Latest News

ক্যাটাগরি