গাছ পাচার ও ভুয়া পারমিট বানিজ্যে কোটিপতি রেঞ্জ কর্মকর্তা নজরুল

পার্বত্য চট্টগ্রামের দক্ষিণ বন বিভাগের কর্ণফুলী ও বরকল স্টেশনে দায়িত্ব পালনকারী এক বন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভয়াবহ দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী শাসনামলে সরকারের উচ্চপর্যায়ের তদবিরের মাধ্যমে রাঙামাটির গুরুত্বপূর্ণ পোস্টিংয়ে যোগদান করেন ওই কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। একের পর এক লোভনীয় স্থানে পোস্টিং পেয়ে তিনি অল্প সময়ের মধ্যেই গড়ে তোলেন কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের পাহাড়।
সূত্র জানায়, নজরুল ইসলাম প্রথমে কর্ণফুলী রেঞ্জে দায়িত্ব গ্রহণ করেন, যেখানে ঐতিহাসিক ১৯২৭ সালের সেগুন বাগান রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, কাপ্তাই মুখ বিট কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশ করে সেখানকার মা সেগুন গাছ কেটে কর্ণফুলী নদী দিয়ে পাচার করে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেন তিনি।
পরবর্তীতে মাত্র এক বছরের মাথায়, চাকরির নীতিমালা উপেক্ষা করে রেঞ্জে দুই বছর পূর্ণ না করেই ঘুষের বিনিময়ে নজরুল ইসলামকে বরকল স্টেশনে বদলি করে দেন তৎকালীন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা শোয়াইব খান। অভিযোগ রয়েছে, বদলির বিনিময়ে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করা হয়।
বরকল স্টেশনে দায়িত্ব পাওয়ার পর নজরুল ইসলাম আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। স্থানীয় সূত্র জানায়, তিনি ভুয়া জোত পারমিটের মাধ্যমে নিয়মিত বিপুল পরিমাণ কাঠের লেনদেন চালিয়ে আসছেন। অভিযোগ রয়েছে, পারমিট ইস্যুর নামে ভারত থেকে চোরাই পথে আসা সেগুন কাঠ বাংলাদেশে প্রবেশ করিয়ে বৈধতা দেওয়া হচ্ছে। এসব কাঠের অধিকাংশই গাছ না কেটে বরকল স্টেশনের পারমিট দেখিয়ে পাচার করা হচ্ছে।
দীর্ঘ চার-পাঁচ বছর বন্ধ থাকার পর আবারও জোত পারমিট চালু করেন শোয়াইব খান ও নজরুল ইসলাম। এ নিয়ে রাঙামাটি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কার্যালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র।
স্থানীয় একাধিক প্রশাসনিক কর্মকর্তাও এসব অনিয়ম সম্পর্কে অবগত থাকার কথা স্বীকার করেছেন, তবে কেউ প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি হননি।
জনমনে প্রশ্ন উঠেছে—এই দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কবে নেওয়া হবে? এবং, কীভাবে শত বছরের প্রাকৃতিক বনভূমি দিনের আলোয় লুটপাট চলছে প্রশাসনের নাকের ডগায়?
এই বিষয়ে রেঞ্জ কর্মকর্তা নজরুকে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেনি।