চট্টগ্রামে স্বৈরাচারের পুনর্জাগরণের চেষ্টা তাহেরের

স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের ইতিহাসে নিন্দিত নাম জাতীয় পার্টি। সাবেক সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে দলটি দীর্ঘকাল ক্ষমতায় থেকে দমন-পীড়নের রাজনীতি চালিয়েছে। বর্তমানে এরশাদের ভাই গোলাম মোহাম্মদ কাদের দলটির চেয়ারম্যান হলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা তাকে আওয়ামী লীগের ‘দোসর’ বলেই চিহ্নিত করছেন। দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে জাতীয় পার্টি সহযোগী ভূমিকা পালন করেছে।
২০২৫ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র ও জনতা দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করে। সেই ঘটনার পর থেকে সারাদেশে জাতীয় পার্টির কার্যক্রম কার্যত অচল হয়ে পড়ে। কিন্তু ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। এখানেই দলটির কার্যক্রম নতুন করে দৃশ্যমান হচ্ছে, আর সেই নেতৃত্ব দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের সুবিধাভোগী হিসেবে পরিচিত আলহাজ্ব আবু তাহের।
স্থানীয় সূত্রের দাবি, আবু তাহের মূলত জাতীয় পার্টির ব্যানারে আওয়ামী লীগকে চট্টগ্রামে পুনরায় সংগঠিত করতে সক্রিয় রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগের ছায়াতলে থেকে তিনি দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করেছেন। এবার জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে তার নিয়োগকে ঘিরে সেই অভিযোগ আরও জোরালো হয়েছে।
২৬ জুন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে তাকে দলের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। চিঠিতে তার সাংগঠনিক দক্ষতার প্রশংসা থাকলেও বাস্তবে চট্টগ্রামে তার ভূমিকা নিয়ে দলের ভেতরে ও বাইরে তীব্র সমালোচনা রয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে তিনি দলের চেয়ারম্যানের উপদেষ্টার দায়িত্বে থাকলেও, তার বিরুদ্ধে একক আধিপত্য কায়েম, বিরোধী কণ্ঠ দমন এবং নিজের অনুসারীদের বিভিন্ন পদে বসানোর অভিযোগ রয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এই নিয়োগ জাতীয় পার্টির পুনর্গঠনের পরিবর্তে এক ধ্বংসাত্মক নেতৃত্বকে পুরস্কৃত করার সামিল।
চট্টগ্রাম বরাবরই গণতান্ত্রিক চেতনার ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। সেই জায়গায় স্বৈরতান্ত্রিক ঐতিহ্যের অধিকারী একটি দলকে পুনরায় সক্রিয় করার চেষ্টা অনেকেই ‘গণতন্ত্রের ওপর আঘাত’ হিসেবে দেখছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জাতীয় পার্টি এখনো স্বৈরশাসনের ছায়া থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি।
আবু তাহেরপন্থীরা অবশ্য দাবি করছেন, তিনি দলের দুঃসময়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং বর্তমানে সংগঠন পুনর্গঠনের কাজ করছেন বলেই তাকে প্রেসিডিয়াম পদে আনা হয়েছে। কিন্তু তার অধীনে দলীয় কার্যক্রম কতটা গণভিত্তি তৈরি করতে পেরেছে — তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেছে। বরং দলীয় কোন্দল, নতুন প্রজন্মের অবহেলা এবং অভ্যন্তরীণ অসন্তোষের অভিযোগই বেশি শোনা যাচ্ছে।
বিশেষ করে আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করেও এখন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে উঠে আসার বিষয়টি অনেকের কাছে ‘রাজনৈতিক প্রতারণা’ বলেই বিবেচিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে আলহাজ্ব আবু তাহেরের মন্তব্য জানতে চাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। ফলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।