Ads

চালের দাম বাড়ছে, চাপে গরিব মানুষ

চালের দাম বাড়ছে, চাপে গরিব মানুষ
ছবি সংগৃহীত।

চাল বাংলাদেশের মানুষের প্রধান খাদ্য। কিন্তু সম্প্রতি চালের দাম বাড়ার কারণে সাধারণ ও নিম্নআয়ের মানুষ নতুন করে চাপের মুখে পড়েছে। একদিকে আয় বাড়ছে না, অন্যদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পাশাপাশি চালের দামও লাগামছাড়া হয়ে উঠেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে প্রায় ১৩ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে সরকারিভাবে এসেছে ৮ লাখ ৩৫ হাজার টন এবং বেসরকারি পর্যায়ে প্রায় ৪ লাখ ৭০ হাজার টন। এছাড়া বোরো মৌসুমে উৎপাদন ভালো হলেও বাজারে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি।

সরকারি সংস্থা টিসিবি জানায়, মোটা চালের কেজি এক মাস আগেও যেখানে ৫০ টাকা ছিল, এখন তা ৫৫ টাকায় উঠেছে। মাঝারি চালের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০-৬৫ টাকা, আর সরু মিনিকেট বা বাশমতিসদৃশ চালের কেজি ৭৫-৮৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। বাস্তব বাজারে এই দাম আরও বেশি, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, পাইজাম, বিআর-২৮, মোটা বা মাঝারি চাল কিনতে হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকা কেজি দরে। ২৫ কেজির বস্তা কিনতে গেলে আগের চেয়ে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি দিতে হচ্ছে।

 

রাজধানীর কাজীপাড়ার গৃহিণী তানিয়া বেগম বলেন, ঈদের আগে যে চালের বস্তা ২ হাজার ১৫০ টাকায় পেয়েছিলেন, এখন তা কিনতে হচ্ছে ২ হাজার ৩০০ টাকায়। প্রতি কেজিতে বেড়েছে ৬ টাকার মতো। সংসারের অন্য খরচও বাড়ছে, কিন্তু আয়ের কোনো গতি নেই। এই অবস্থায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের দিন চলে অনিশ্চয়তায়। শুধু শহরে নয়, জেলা শহর ও মফস্বল এলাকায়ও চালের দাম বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, মিলগেট থেকেই চালের দাম বাড়ছে, ফলে বিক্রিও বাধ্য হয়ে বেশি দামে করতে হচ্ছে।

বোরো মৌসুমে সাধারণত চালের দাম কিছুটা কমে। কারণ এই মৌসুমেই দেশের মোট চাল উৎপাদনের অর্ধেকের বেশি হয়। কিন্তু এবার মে মাস পার না হতেই জুনেই চালের বাজার গরম হতে শুরু করে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো—চাল আমদানির শুল্ক বাড়ানো, বাজারে আমদানি কার্যক্রমের অনিশ্চয়তা, সরবরাহ ঘাটতি এবং অভ্যন্তরীণ মজুতদারদের প্রভাব।

গত বছর আগস্টে বন্যার কারণে আমন মৌসুমে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছিল। তখন সরকার শুল্ক কমিয়ে ১০ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দেয়। সেই সিদ্ধান্তের ফলেই ১৩ লাখ টন চাল আমদানি হয়, যার বেশির ভাগই আসে সরকারি উদ্যোগে। কিন্তু এরপর চাল আমদানির অনুমতি ও শুল্ক ছাড়ের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। ফলে এ বছর নতুন করে আমদানি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে চাল আমদানিতে মোট শুল্ক–কর দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬৭.৫ শতাংশ, যা চালের দাম বাড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

বিশ্ববাজারে চালের দাম কমেছে। যেমন, থাইল্যান্ডের চালের প্রতি টনের দাম ছিল ৫৮৬ ডলার, যা এখন নেমে এসেছে ৪১৯ ডলারে। একইভাবে ভিয়েতনামের চালের দামও কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ। অথচ বাংলাদেশে সেই প্রভাব পড়ছে না। কারণ, দেশীয় বাজারে আমদানির সুযোগ সীমিত। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতীয় চালের দামও তুলনামূলকভাবে কম। বর্ধমান অঞ্চল থেকে রপ্তানি হওয়া চালের কেজি ৩৪ রুপি, যা বাংলাদেশে আনতে খরচ হয় ৫৩-৫৪ টাকা। অথচ দেশে সেই চালও নেই।

আমদানিতে বাধা থাকায় দেশের ব্যবসায়ীরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে বাজার চালাচ্ছেন। অনেকে আগেভাগে বিপুল পরিমাণ ধান-চাল কিনে মজুত করে রেখেছেন। প্রতিযোগিতা না থাকায় দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। সরকারের একাধিক সূত্র বলছে, বাজারে স্বাভাবিক প্রতিযোগিতা ফেরাতে আমদানিকে সহজ করা ছাড়া বিকল্প নেই। অনেক অর্থনীতিবিদ মত দিচ্ছেন, অন্তত তিন মাসের জন্য চাল আমদানিতে শুল্ক তুলে নেওয়া হোক, দেখা যাক তাতে বাজারে প্রতিক্রিয়া কেমন হয়।

 

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। সুদের হার বাড়িয়ে বাজারে টাকা সরবরাহ কমানো হয়েছে। এতে মূল্যস্ফীতির গড় হার কিছুটা কমলেও এখনো তা ৯ শতাংশের উপরে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু মুদ্রানীতি দিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ও বাজার ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখা জরুরি। বিশেষ করে চালের মতো প্রধান খাদ্যশস্যে কোনো ঘাটতি তৈরি হলে তা পুরো অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, বাংলাদেশ এখনো চাল উৎপাদনে পুরোপুরি স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। তাই সঠিক সময়ে আমদানি নিশ্চিত করতে না পারলে বাজারে ঘাটতি তৈরি হয়। এ ঘাটতি সহজেই ব্যবসায়ীদের জন্য অতিরিক্ত মুনাফার সুযোগ তৈরি করে। তিনি আরও বলেন, যেহেতু এখন দেশের বাজারে চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম, তাই আমদানির পথ খুলে দিয়ে সেই ঘাটতি পূরণ না করলে সাধারণ মানুষ আরও বড় চাপে পড়বে।

সরকারি হিসেবে বর্তমানে খাদ্যশস্যের মজুত প্রায় ১৮ লাখ টন। এর মধ্যে ১৫ লাখ টনের বেশি চাল। তবে সেটি কতদিন চলবে বা চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ, দেশের প্রায় ১৭ কোটি মানুষ এখনও চাল নির্ভর খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত। তাই চালের বাজারে অস্থিরতা মানেই পুরো খাদ্যপণ্যের বাজারে চাপ। বর্তমান পরিস্থিতিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে আগামী দিনে সংকট আরও তীব্র হতে পারে।

 

সংক্ষেপে, বাজারে চালের দাম বৃদ্ধি শুধু একটি পণ্য সমস্যার বিষয় নয়, এটি একটি বৃহৎ অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে। আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে সাধারণ মানুষ। চালের দাম নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া এখন সময়ের দাবি। তা না হলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, খাদ্য নিরাপত্তা ও সামাজিক স্থিতিশীলতা—সবই হুমকির মুখে পড়বে।




Ads

খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় দু’পক্ষের গোলাগুলিতে নিহত ৪

খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় দু’পক্ষের গোলাগুলিতে নিহত ৪
ছবি সংগৃহীত।


খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় দু’পক্ষের গোলাগুলিতে অন্তত ৪ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। শুক্রবার দিবাগত রাত ৮টার দিকে দীঘিনালার দুর্গম নারাইছড়ি এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ইউপিডিএফ-জেএসএস’র মধ্যে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। তবে ইউপিডিএ ‘র এক প্রেসবার্তায় এ ঘটনা গুজব বলে দাবি করেছে।
পুলিশ জানায়, নারাইছড়ি বিওপি থেকে তিন কিলোমিটার দক্ষিণে জোড়াসিন্ধু কারবারি পাড়া এলাকায় শুক্রবার রাতে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ও সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি-জেএসএস’র মধ্যে গোলাগুলি হয়। এ সময় তিনশ থেকে চারশ রাউন্ড গুলি ছোড়ে দুই পক্ষ। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে এ ঘটনা ঘটেছে।
দীঘিনালা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. জাকারিয়া বলেন, এলাকাটি অত্যন্ত দুর্গম। তবে জানতে পেরেছি গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে কয়েকজন মারা যাওয়ার খবর শুনেছি তা নিশ্চিত নই।
তবে ইউপিডিএফের সংগঠক অংগ্য মারমা এমন ঘটনার বিষয়টি অস্বীকার করে গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেসবার্তায় বলেন এটি একটি গুজব। ২৬ জুলাই ২০২৫ শনিবার সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে ইউপিডিএফের মুখপাত্র অংগ্য মারমা উক্ত মন্তব্য করে আরও বলেন, মিডিয়ায় প্রচারিত উক্ত গোলাগুলির ঘটনা সংঘটিত হওয়ার কোন তথ্য ইউপিডিএফের জানা নেই এবং ইউপিডিএফ একটি গণতান্ত্রিক দল হিসেবে ‘গণমুক্তি ফৌজ’ বা ‘পিপলস্ লিবারেশন আর্মি’ নামে তার কোন সামরিক শাখা থাকার প্রশ্ন একেবারে অবান্তর ও কাল্পনিক। ইউপিডিএফ কখনো এ ধরেনরে সংঘাতে জড়ায় না বলে দাবি করেন।




Ads

বিমান বিধ্বস্তে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩১ : আইএসপিআর

বিমান বিধ্বস্তে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩১ : আইএসপিআর
ছবি সংগৃহীত।


ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩১ জনে দাঁড়িয়েছে। দুর্ঘটনায় আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতলে ভর্তি আছেন ১৬৫ জন


মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দুপুরে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বিভিন্ন হাসপাতালে নিহত ও আহতদের সংখ্যা তুলে ধরা হয়েছে—

এর আগে সকালে প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ২৭ জন নিহত হওয়ার তথ্য জানান। এর মধ্যে ২৫ জনই শিশু বলে জানান তিনি।




Ads

শিক্ষার্থীদের ছয়টি দাবির প্রত্যেকটিই যৌক্তিক বলে মনে করে সরকার

শিক্ষার্থীদের ছয়টি দাবির প্রত্যেকটিই যৌক্তিক বলে মনে করে সরকার
ছবি সংগৃহীত।


রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের ছয়টি দাবির প্রত্যেকটিই যৌক্তিক বলে মনে করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।


মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দুপুরে উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে উপস্থিত হয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের পাঠানো এক বিবৃতিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে।  


আলোচনা শেষে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের বলেন, মাইলস্টোন স্কুলে একটি তথ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এতে নিহত ও আহতের তথ্য থাকছে। কেউ নিখোঁজ থাকলে সে তথ্য থাকছে। এখান থেকে তথ্য নিয়মিত হালনাগাদ করা হচ্ছে। নিহত ও আহত পরিবারের ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন এবং ট্রমা ম্যানেজমেন্ট সাপোর্টের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

জনগণের ভিড় নিয়ন্ত্রণের সময় সেনাবাহিনীর কর্তব্য পালনকালে কয়েকজন সেনাসদস্য কর্তৃক শিক্ষার্থীদের ওপর মারধরের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে দুঃখপ্রকাশ করা হয়েছে এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সেনা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে বলে জানান তিনি


জনবহুল এলাকায় প্রশিক্ষণ বিমান না চালানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বিমান বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে বলেও আইন উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের জানান।

শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার শিক্ষার্থীদের বলেন, আগামী ২৪ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য এইচএসসি পরীক্ষার তারিখ নিয়মিত পরীক্ষা শেষে ঘোষণা করা হবে।



দৈনিক সাম্পান

Latest News

ক্যাটাগরি